বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
The Daily Post

টাঙ্গাইলে ২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৫  

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলে ২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৫  

টাঙ্গাইলে ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে ১৩৫ জন এবং আহত হয়েছে ১৩৯ জন। এ দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার ও আহতরা অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরা অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে। অভাব অনটনকে নিত্য সঙ্গী করে তাদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৫৩টি সড়ক  দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১৩৫ জনের মৃত্যু এবং ১৩৯ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ২১, এপ্রিলে ১৩ জন, মে মাসে ৬ জন, জুনে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৮ জন, আগস্টে ৩ জন, সেপ্টেম্বরে ১০ জন, অক্টোবরে ১৩ জন, নভেম্বরে ৬ জন ও ডিসেম্বরে ১০ জন।

এসব দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন, মার্চে ২২ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৮ জন, জুনে ১২ জন, জুলাইয়ে ১০ জন, আগস্টে ৩ জন, সেপ্টেম্বরে ১০ জন, অক্টোবরে ১৩ জন, নভেম্বরে ১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯ জন অসহায় জীবন-যাপন করছে।

জানা যায় গত ২৩ ডিসেম্বর সখিপুর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর মধুপুরে পিকআপ ভ্যানের চাপায় ইমাম ও মোয়াজ্জিন নিহত হন। 

নিহত দুজন মধুপুরের কাকরাইদ ও রামকৃষ্ণ বাড়ির মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিন ছিলেন। তারা দুজনে ভোরে মসজিদে আযান দেয়ার ও ইমামতি করার জন্য মোটরসাইকেলে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঘটনাস্থলে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তারা দুজন নিহত হন। এদিকে একই উপজেলায় ২১ ডিসেম্বর আশ্রা বাজারে দুটি মটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলের মৃত্য হয়।

কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে পারভেজ তালুকদার বলেন, সখিপুরের বড়চওনা এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার ডান পা ভেঙে সংসারের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমার পরিবারে বৃদ্ধা মা বাবা ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমি একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি। গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে ধারদেনা করে চিকিৎসা নিয়েছি। চিকিৎসা করতে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি। দুর্ঘটনার আগে কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতাম। বর্তমানে আমার ডান পা পুরোপুরি ভালো হয়নি। ভালো হলে হয়তো আবার আগের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারতাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মো. তুহিন তালুকদার বলেন, বেশি ট্রিপের আশায় চালকরা পাল্টাপাল্টি যানবাহন চালানো, বেপরোয়া গতি, তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কের  দাপিয়ে চলা, টহল পুলিশ এবং ট্র্যাফিক পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকা, সিএনজি, অটো ও ব্যাটারি চালিত রিকশা সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া, এদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার নজরদারি না থাকা ও তিন চাকার যানবাহন চালকদের কোন প্রকার প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, চালকদের নিরাপদ সড়ক আইন সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকা দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন তিনি। 

কয়েকজন বাস চালক জানান, চালকের ট্রিপের উপর নির্ভর করে মালিকের কাছ থেকে তাদের পারিশ্রমিক নিতে হয়। মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী না থাকায় বেশি ট্রিপ দিতে গিয়ে মহাসড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়।

টাঙ্গাইলের নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহা. সাজ্জাদ খোশনবীশ বলেন, বহু মানুষ সড়কে দুর্ঘটনা শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। দুর্ঘটনার পর আর কেউ ভুক্তভোগী পরিবারের খবর রাখে না। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেক পরিবারের ভাগ্যের চাকা একেবারেই থেমে গেছে। তাই সরকারের কাছে দাবি সড়কের আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সচেতন হতে। এছাড়াও দুর্ঘটনা কমাতে টহল পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশ ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছে কি না এ বিষয়ে কঠিন নজরদারি প্রয়োজন। 
 
টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাড. জাফর আহমেদ বলেন, যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। চালকদের সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সড়ক আইন সর্ম্পকে সচেতন করা। এছাড়াও ছোট বড় সব যানবাহনের চালকদের ডাটাবেজ তৈরি করলে চালকরা নিজ নিজ উদ্যোগে দক্ষতার সহিত কাগজপত্র তৈরি করে মাঠে নামতো বলে তিনি মনে করেন। এতে করে দক্ষ চালকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেত। দুর্ঘটনাও কমে যেত।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক শেখ মাহতাব উদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছরই আহত এবং নিহতদের ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি। এছাড়াও ২০২৪ সালে ২২ জন নিহত এবং আহতরা আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। এরমধ্যে নিহত রয়েছে ১৮ জন ও আহত রয়েছে ৪ জন। এদেরকে  যাচাই বাছাই করে  আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। 

এবিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল জানান, ত্রুটিপূর্ণ  যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, মহাসড়কে স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের  ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করা এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার তদারকি মহাসড়কে চাঁদাবাজিসহ দুর্ঘটনার কারণগুলো যথাযথ নজরদারিসহ সব ধরনের  ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।

টিএইচ